শখের বিড়াল দুষ্টু ভীষণ, আঁচড় দিয়েছে পায়; ভয়ে ভয়ে রাত্রীযাপন এখন কি উপায়? আপনিও কি তাদের একজন যারা বিড়ালের আঁচড় খেয়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন আর ভাবছেন “বিড়ালের আঁচড় দিলে কি করা উচিত?” আপনার চিন্তার কারণ রয়েছে কি-না সেটা সঠিক ভাবে জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে। কেননা এই পর্যায়ে জানানো হবে বিড়াল আঁচড় দিলে করণীয় কি সে বিষয়ে।
বিড়ালের আঁচড় – চিন্তা নাকি নিশ্চিন্তে থাকা?
আপনি কি বিড়াল পালছেন? উত্তর হ্যাঁ কিংবা না যেটাই হোক না কেনো বিড়ালের আঁচড় খেয়েছেন এটা শিওর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের আঁচরে আপনার কি কোনো ক্ষতি হবে কি না তাইতো? এই বিষয়ে হলফ করে বলার উপায় নেই Additional কিছু বিষয়ে ক্লিয়ার না হওয়ার আগ অব্দি। সেগুলো কি?
প্রশ্ন…
১) বিড়ালটি কি আপনার পোষা নাকি বেওয়ারিশ?
২) যদি পোষা হয় তবে তাকি কি ভেকসিনেশনের মধ্যে রাখা হয়েছে?
৩) বিড়ালের কি কোনো রোগ বালাই আছে?
৪) বিড়াল আপনাকে আঁচড় দেয়ার ১০ দিনের মধ্যে জিবিত আছে নাকি মারা গেছে?
এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তরই পারে আপনার সকল টেনশন দূর করতে আবার টেনশন সৃষ্টি করতে। খুলে বলি। যদি বিড়াল পোষা হয় তবে ৫০% টেনশন এমনিতেই চলে যাবে। বাকি ৪০% চলে যাবে যদি ভেকসিনেশন রেগুলার করা হয় আর কোনো রোগ বালাই না থাকে। আর আপনাকে আঁচড় দেয়ার ১০ দিনের মধ্যে যদি বিড়াল মারা না যায় তবে আপনি ১০০% নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন এই ভেবে যে বিড়ালের আঁচড়ে আপনার বড় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
তবে বিপদ তখনই যখন এই বিষয় গুলোর বিপরীত ঘটবে। কি বিপদ? আসুন জেনে নেই।
বিড়াল আঁচড় দিলে কি ক্ষতি হয়?
পরিসংখ্যান মোতাবেক, বাংলাদেশে বে-ওয়ারিশ কুকুর বিড়ালের দ্বারা ৯১% এবং বাসায় পোষা কুকুর বিড়ালের দ্বারা শতকরায় ৫% জলাতংক রোগ ছড়ায়। সাধারণত কুকুরের আঁচড়ের চেয়ে বিড়ালের আঁচড় বেশি ভয়ংকর হয় কেননা বিড়ালের আঁচড় sharp cutting wound, confined to a tiny space but deeply penetrated like injection syringe। মানে হলো বিড়ালের নখ বেশ ধারালো ও চোখা হয়। এতে করে বিড়ালের আঁচড়ে কোনো জিবাণু বা ভাইরাস একদম ক্ষত স্থানে পৌছায় নি তা বলা মুশকিল।
বিড়ালের আঁচড়ে যদি রক্তক্ষরণ হয় তবে উক্ত স্থান ফুলে যাবে এবং ব্যাথার তীব্রতা অল্প হবে। আর যদি কোনো ভাবে বিড়াল র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তিত হয় তবে তা সহজেই হিউম্যান বডিতে চলে আসতে পারবে। ভয়ংকর ব্যাপার এই যে, যদি এই র্যাবিস বা জলাতংক ভাইরাস আপনার বডিতে প্রবেশ করে আর আপনি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করান তবে ১০০% জীবননাশের সম্ভাবনা আছে।
তাহলে বিড়াল আঁচড় দিলে কি ক্ষতি হয় তা যদি একনজরে হাইলাইট করি…
১) বিড়ালের নখ ধারালো হয়, তাই আঁচড় দিলে ত্বকে ক্ষত হতে পারে।
২) ক্ষত গভীর হলে, রক্তপাত হতে পারে।
৩) বিড়ালের আঁচড়ে অ্যালার্জি হতে পারে।
৪) আঁচড়ের ফলে ত্বকে দাগ হতে পারে।
৫) আঁচড়ের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৬) সংক্রমণের ফলে জ্বর, ফোলাভাব, ব্যথা, পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৭) বিড়াল যদি জলাতঙ্ক বাহক হয় আঁচড়ের মাধ্যমে জলাতঙ্কের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি রোগ হয়?
হ্যাঁ অবশ্যই, যেমনটা বলেছি যে – যদি বিড়ালের ভেকসিনেশন না করা থাকে এবং র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে ১০০% চিকিৎসা করাতে হবে। পাশাপাশি Additionally কিছু রোগের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরছি যা হতে পারে তবে সম্ভাবনা কম এবং হয়েছে কি না তা সঠিক ভাবে জানতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবার তবে আসুন জেনে নেই বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কি রোগ হতে পারে।
সাধারণ সংক্রমণ:
- ব্যাকটেরিয়া: বিড়ালের নখে বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেমন Staphylococcus aureus এবং Streptococcus spp. যা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ত্বকের সংক্রমণ (cellulitis) এবং abscess তৈরি করতে পারে।
- Pasteurella multocida: এটি একটি ব্যাকটেরিয়া যা বিড়ালের লালায় থাকে এবং আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে Pasteurellosis নামক রোগ তৈরি করতে পারে। এর লক্ষণ গুলি হল জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং আঁচড়ের স্থানে ফোলা ও ব্যথা।
- Bartonella henselae: এটি একটি ব্যাকটেরিয়া যা বিড়ালের আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে Cat-scratch disease (CSD) নামক রোগ তৈরি করতে পারে। এর লক্ষণ গুলি হল জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, lymph nodes ফুলে যাওয়া এবং আঁচড়ের স্থানে ফোলা ও ব্যথা।
গুরুতর সংক্রমণ:
- Tetanus: এটি Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে হওয়া একটি গুরুতর রোগ। এটি স্পেশম, মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
- Rabies:এটি সবচেয়ে ভয়ংকর ও সচারচর হয়া একটা রোগ। একটি প্রাণঘাতী রোগ যা Lyssavirus নামক ভাইরাস থেকে হয়। এটি বিড়ালের লালায় থাকে এবং আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এটা হওয়ার পর চিকিৎসা না করালে মৃত্যু ১০০% নিশ্চিত।
বিড়াল আঁচড় দিলে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়?
যদি বিড়ালটি বে-ওয়ারিশ হয়, ভেকসিনেশনের আওতায় আছে কি-না সেটা জানা না যায়। তবে রিস্ক নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আর আঁচড় দেয়ার ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে যদি বিড়াল অসুস্থ হয় কিংবা মারা যায় তবে আপনি পড়বেন মস্তবড় বিপদে। তাই সময় থাকতেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে,
- যদি আঁচড় গভীর না হয় এবং রক্ত না বের হয়।
- যদি বিড়ালটির নিয়মিত টিকা দেওয়া হয় থাকে।
- যদি বিড়ালটি সুস্থ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে।
তাহলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হলে, বিড়াল আঁচড়ের পর যেসব ভ্যাকসিন দিতে হয় তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন: জলাতঙ্ক এক প্রাণঘাতী রোগ যা বিড়ালের আঁচড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই, বিড়াল আঁচড়ের পর জলাতঙ্কের টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টেটেনাসের টিকা: টেটেনাস এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা মারাত্মক হতে পারে। টেটেনাসের টিকা প্রতি ১০ বছর পরপর নেওয়া উচিত।
ডিপথেরিয়া, টেটেনাস, অ্যাকুলার কাশির টিকা (DTaP): DTaP টিকা শিশুদের জন্য দেওয়া হয়। যদি আপনি DTaP টিকা পূর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণ না করে থাকেন, তাহলে বিড়াল আঁচড়ের পর এটি নেওয়া উচিত।
প্যাসচুরেলা টিকা: প্যাসচুরেলা এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া যা বিড়ালের আঁচড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এটি জ্বর, মাথাব্যথা, এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যাট-স্ক্র্যাচ ডিজিজ (CSD) টিকা: CSD এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা বিড়ালের আঁচড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এটি জ্বর, মাথাব্যথা, এবং ফোলা লিম্ফ নোডের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?
বিড়াল কামড়ালে দ্রুততম সময়ে টিকা নেওয়া উচিত, আদর্শভাবে কামড়ানোর 24 ঘন্টার মধ্যে দেয়াই সর্বোত্তম। তবে, 7 দিনের মধ্যে টিকা নিলেও পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তবে, যদি বিড়ালটি জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া থাকে এবং ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ থাকে, তাহলে আপনার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যদি বিড়ালটি জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া না থাকে বা ১০ দিনের মধ্যে মারা যায়, তাহলে আপনার অবশ্যই টিকা নিতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের বিড়াল কামড়ালে দ্রুততম সময়ে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
প্রাথমিকভাবে বিড়ালের আঁচড় দিলে কি করা উচিত?
বিড়াল আপনাকে আঁচড় দিয়েছে, এখন আপনি ভ্যাকসিনেশন করবেন কি না সেটা পরের চিন্তাভাবনা তবে প্রাথমিক ভাবে কিছু কাজ রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। সেগুলো হলো:
১) ক্ষত পরিষ্কার করা: আঁচড়ানো স্থানটি ঠান্ডা সাবান পানি দিয়ে ৫ মিনিট ধরে ধুয়ে ফেলুন। এক্ষেত্রে জীবাণুনাশক সাবান (যেমন: Dettol, Savlon) ব্যবহার করে আঁচড়ানো স্থানটি পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আঁচড়ানো স্থানটি শুকিয়ে নিন।
২) ক্ষত পরীক্ষা করা: আঁচড় গভীর কিনা তা পরীক্ষা করুন। সংক্রামন কম হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে উক্ত স্থানটি ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকিয়ে দিন।
৩) ডাক্টারের শরণাপন্ন হওয়া: পরসময় যদি জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ক্ষতস্থানে ফোলাভাব, পুঁজ বের হওয়া, লালভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
বিড়ালে আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয়?
আসলে Specific ভাবে বিড়ালে আঁচড় দিলে পড়তে হয় এমন কোনো দোয়া নেই। তবে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে বিষাক্ত প্রাণীর কামড়, আক্রমণ ও ক্ষতি থেকে বাচার জন্য বিশেষ এক দোয়া শিখিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী রাসুন (সাঃ) আসুন তবে সেটিই দেখে নেই।
[ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَق ]
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।
পরিশেষে কিছু কথা
বিড়াল আঁচড় দিক, কিংবা কামড় আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। যারা নিজ বাড়িতে বিড়াল লালন পালন করি তারা রেগুলার বিড়ালকে ভ্যাকসিনেশনের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবো যাতে করে নিজেদেরসহ বাইরের কারো ক্ষতি না হয়। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য দিয়ে শেষ করতে চাই যে, র্যাবিস ভাইরাস যাকে আমরা জলাতঙ্ক হিসেবে চিনি তা প্রাণীদের থেকে মানুষের সংক্রামণ হয় তবে মানুষ থেকে মানুষে হয় না। ভয় নয় সচেতনা দিয়েই করতে হবে জয়।