বিড়াল! এই আদুরে প্রাণীটা আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয়। কারো কাছে সে শুধুই একটা পোষা প্রাণী, আবার কারো কাছে পরিবারের একজন সদস্য। কিন্তু বিড়াল কি শুধুই আদরের, নাকি এর কিছু খারাপ দিকও আছে? চলুন, আজ আমরা বিড়াল নিয়ে সবকিছু জেনে নেই যেমন – বিড়ালের উপকারিতা ও বিড়ালের অপকারিতা গুলো। পাশাপাশি বিড়াল পালার কিছু টিপস দিবো যা আপনার সাথে আপনার বিড়ালের সম্পর্ককে আরো মজবুদ করবে।
বিড়ালের উপকারিতা | বিড়ালের ভালো দিকগুলো
বিড়াল পোষার অনেক সুবিধা আছে। এরা যেমন আমাদের নিঃসঙ্গতা দূর করে, তেমনি আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। বিড়াল আমাদের জীবনকে কিভাবে আরও সুন্দর করে তোলে, আসুন দেখে নেয়া যাক।
মনের শান্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
বিড়াল আমাদের দুশ্চিন্তা কমাতে দারুণ সাহায্য করে। যখন একটি বিড়াল আপনার কোলে এসে বসে এবং “ঘুরঘুর” শব্দ করে, তখন আপনার শরীরে এক ধরনের শান্তির অনুভূতি হয়। এটা প্রমাণিত যে, বিড়াল পাললে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল পোষা মানুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কম হয়।
আমার এক বন্ধু ডিপ্রেশনে ছিল। সে একটা বিড়াল পুষতে শুরু করার পর থেকে তার মানসিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। বিড়ালটা যেন তার জীবনের নতুন আলো।
শারীরিক সুস্থতায় বিড়ালের উপকারিতা
বিড়ালের “মিউ মিউ” ডাক শুধু বিরক্তিকর নয়, এটা থেরাপির মতো কাজ করে। এই ডাকের একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি আছে, যা আমাদের মস্তিষ্কে পজিটিভ প্রভাব ফেলে। এছাড়া, বিড়াল ঘুমের মান উন্নয়নেও সাহায্য করে।
বিড়ালের “purring” বা “ঘুরঘুর” শব্দ হাড়ের সমস্যা ও পেশীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
বিড়ালের ডাকের ধরন | সম্ভাব্য থেরাপিউটিক প্রভাব |
Purring (25-150 Hz) | হাড়ের জোড়া লাগা ত্বরান্বিত করে, পেশীর প্রদাহ কমায়, ব্যথা কমায় |
এলার্জি প্রতিরোধে বিড়ালের উপকারিতা
শুনতে অবাক লাগলেও, ছোটবেলায় বিড়ালের সাথে থাকলে বাচ্চাদের এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের আশেপাশে বিড়াল থাকলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
বিড়ালের সামাজিক উপকারিতা
বিড়ালপ্রেমী ছেলেদের মেয়েরা একটু বেশি পছন্দ করে, এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিড়াল নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, যেখানে মানুষজন তাদের বিড়ালের ছবি ও গল্প শেয়ার করে।
বিড়াল পোষেন যে পুরুষ, মেয়েরা নাকি তাদের একটু বেশি পছন্দ করে! কারণ, এটা প্রমাণ করে যে, তিনি একজন যত্নশীল মানুষ।
বিড়ালের অপকারিতা | বিড়ালের খারাপ দিকগুলো
বিড়াল পোষার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে। কিছু সমস্যা হতে পারে, তবে সেগুলো কিভাবে সামলাতে হয়, তা জানা থাকলে বিড়াল পালন সহজ হয়ে যায়।
এলার্জি সমস্যা
অনেকের বিড়ালে এলার্জি থাকে। বিড়ালের পশম, লালা এবং ত্বকের মৃত কোষ থেকে এলার্জি হতে পারে। এলার্জি থেকে বাঁচতে বিড়ালকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় এবং ঘরবাড়িও পরিষ্কার রাখতে হয়।
যাদের এলার্জি আছে, তাদের বিড়াল নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
জীবাণু সংক্রমণ
বিড়ালের মল থেকে রোগ ছড়াতে পারে। Toxoplasma gondii নামক একটি পরজীবী বিড়ালের মলে থাকে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
গর্ভবতী মহিলাদের বিড়ালের লিটার বক্স পরিষ্কার করা থেকে দূরে থাকা উচিত।
এখানে বিড়াল থেকে ছড়াতে পারে এমন কিছু রোগের নাম ও লক্ষণ দেওয়া হলো:
রোগের নাম | লক্ষণ |
Toxoplasmosis | ফ্লু-এর মতো লক্ষণ, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া |
Cat Scratch Fever | চামড়ায় ফুসকুড়ি, জ্বর, ক্লান্তি |
Ringworm | চামড়ায় গোলাকার লাল দাগ, চুলকানি |
Salmonella | ডায়রিয়া, জ্বর, পেটে ব্যথা |
ঘরের পরিবেশের উপর প্রভাব
বিড়াল অনেক সময় ঘর নোংরা করে। তারা আসবাবপত্র আঁচড়াতে পারে, পশম ফেলতে পারে এবং লিটার বক্সের কারণে ঘরে দুর্গন্ধও হতে পারে।
ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিড়ালকে নিয়মিত গ্রুমিং করানো উচিত এবং লিটার বক্স নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
বিড়াল তো আদরের, কিন্তু ওদের জন্য ঘরদোর একটু বেশিই নোংরা হয়, তাই না?
বিড়াল পালনের কিছু টিপস ও ট্রিকস
বিড়াল পালতে কিছু জিনিস দরকার হয়, যেমন – খাবার, লিটার বক্স, খেলার জিনিস ইত্যাদি। বিড়ালের সঠিক যত্ন নিলে তারা সুস্থ ও সুখী থাকে।
- বিড়ালের খাবার ও স্বাস্থ্য
বিড়ালের জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুব জরুরি। তাদের বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী খাবার দিতে হয়। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হয়।
বিড়ালকে সবসময় পরিষ্কার জল দিতে হবে এবং তাদের খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- বিড়ালের প্রশিক্ষণ ও আচরণ
বিড়ালকে প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। তাদের কিছু সহজ কমান্ড শেখানো যায়, যেমন – “বস”, “দাঁড়াও” ইত্যাদি। খারাপ অভ্যাস কমানোর জন্য তাদের সাথে বেশি সময় কাটানো এবং তাদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত।
বিড়ালকে একটু ট্রেনিং দিলে, দেখবেন আপনার জীবন কতো সহজ হয়ে গেছে!
- বিড়ালের সাথে খেলাধুলা
বিড়ালের সাথে খেললে তাদের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। তারা বিভিন্ন ধরনের খেলনা পছন্দ করে, যেমন – লেজার পয়েন্টার, বল, ফেদার টয় ইত্যাদি।
চুড়ান্ত মন্তব্য
বিড়াল আমাদের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে, তবে এর কিছু খারাপ দিকও আছে। বিড়াল পোষার আগে বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নেয়া উচিত। আপনি যদি বিড়াল ভালোবাসেন এবং এর যত্ন নিতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে একটি বিড়াল আপনার জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে।