Cat Health

বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ: যা ঘটলে বুজবেন বিড়াল আর বাঁচবে না

বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ: যা ঘটলে বুজবেন বিড়াল আর বাঁচবে না

যারা বিড়াল পালন করে তাদের কাছে বিড়াল শুধু একটা পোষা প্রাণী নয়, বরং পরিবারের একটা অংশ। বিড়ালের মায়াবী চাহনি, আদুরে স্বভাব আমাদের জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। কিন্তু একটা সময় আসে যখন আমাদের প্রিয় বিড়ালটি বার্ধক্য কিংবা অসুস্থতার শিকার হয়। তখন তাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা দেখে বোঝা যায় হয়তো সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই সময়টা যে কতটা কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। 

আজ আমরা আলোচনা করবো বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ গুলো নিয়ে, যা আপনাকে এই কঠিন সময়ে প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করবে। কেননা, বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ গুলো জানা থাকলে আপনি আপনার প্রিয় প্রাণীটির শেষ দিনগুলোতে তার পাশে থাকতে পারবেন এবং তাকে কিছুটা আরাম দিতে পারবেন। এই সময়টাতে মানসিক ভাবে দুর্বল লাগা স্বাভাবিক, তবে মনে রাখবেন আপনার ভালোবাসা এবং যত্নই তার শেষ যাত্রাকে কিছুটা সহজ করে দিতে পারে। 

বিড়াল কি কি কারণে মারা যায়?

বিড়াল বিভিন্ন কারণে মারা যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু কারণ স্বাভাবিক, আবার কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অসাবধানতা বা রোগ দায়ী থাকে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

বার্ধক্য: বিড়ালদের গড় আয়ু ১২-১৮ বছর, তবে কিছু বিড়াল ২০ বছরের বেশি বাঁচতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিড়ালের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে এবং ধীরে ধীরে শরীর তার কার্যকারিতা হারায়। 

অসুস্থতা: বিড়াল বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যেমন – কিডনি রোগ, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। সময় মতো চিকিৎসা না করালে এই রোগগুলো মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

দুর্ঘটনা: অনেক সময় গাড়ি দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, বিষক্রিয়া অথবা অন্য কোনো প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে বিড়াল মারা যেতে পারে।

সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ বিড়ালের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে ছোট বিড়ালছানা বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বিড়াল এই সংক্রমণে দ্রুত মারা যেতে পারে।

বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি? (সম্ভব্য ১০টি লক্ষণ)

বিড়ালরা সাধারণত ব্যথা বা সমস্যার কথা বলতে পারে না, এবং অনেক সময় তাদের অসুস্থতা বা জীবন শেষের লক্ষণ বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। তাই এখানে ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে আপনার প্রিয় বিড়ালটি গুরুতর অসুস্থ নাকি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

১) ওজন কমে যাওয়া (Weight Loss)

বিড়ালদের শরীরে প্রচুর লোম থাকে, তাই অনেক সময় ওজন কমে গেলেও বাইরে থেকে বুঝা যায় না। বিশেষ করে যদি আপনার বিড়ালটি খুব একটা কোলে নেন না বা আদর করেন না, তাহলে আপনি সহজে টের পাবেন না। তবে, যদি আপনি দেখেন যে হঠাৎ করে আপনার বিড়ালের শরীরের হাড় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তাহলে এটি চিন্তার বিষয় হতে পারে। এটি শুধুমাত্র বার্ধক্যের কারণে নয়, বরং গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে। তাই দ্রুত একজন পশু-চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২) লুকিয়ে থাকা বা একাকী হয়ে যাওয়া

বিড়ালরা সাধারণত নির্জনতাপ্রিয় প্রাণী, তবে যদি আপনার বিড়ালটি হঠাৎ করে একদম লুকিয়ে থাকতে শুরু করে এবং খুব একটা দেখা না যায়, তাহলে এটি একটি বড় সংকেত হতে পারে। অনেক সময় বিড়ালরা মৃত্যুর আগে একাকী থাকতে চায় এবং এমনকি বাড়ি ছেড়েও চলে যেতে পারে। যদি আপনার বিড়াল আগের চেয়ে বেশি লুকিয়ে থাকে, তাহলে এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

৩) খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া

যদি আপনার বিড়ালটি হঠাৎ করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে এটি একটি বড় বিপদের সংকেত। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন- ব্যথা, ক্যান্সার, কিডনি রোগ বা বার্ধক্যজনিত অন্যান্য সমস্যার কারণে বিড়াল খেতে পারে না। তাই এটি অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪) বেশি সময় ঘুমানো

বিড়ালদের সাধারণত ঘুমানোর প্রবণতা বেশি থাকে, তবে যদি আপনার বিড়ালটি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ঘুমায় এবং আগের মতো সক্রিয় না থাকে, তাহলে এটি চিন্তার কারণ হতে পারে। অনেক সময় বার্ধক্যজনিত ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের কারণেও তারা বেশি ঘুমাতে পারে।

৫) শরীরের লোম অপরিষ্কার ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া

স্বাস্থ্যবান বিড়ালরা নিজেদের পরিস্কার রাখতে খুব সচেতন থাকে। কিন্তু, যদি আপনি দেখেন যে আপনার বিড়ালের গায়ের লোম রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, গিঁট পড়ে যাচ্ছে বা অপরিষ্কার দেখাচ্ছে, তাহলে এটি অসুস্থতার লক্ষণ।

৬) চিকিৎসা কাজ না করা

যদি আপনার বিড়াল ইতোমধ্যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসার কোনো ইতিবাচক ফলাফল না আসছে, তাহলে এটি বোঝার সময় এসেছে যে আপনার বিড়ালের দেহ চিকিৎসার জন্য সাড়া দিচ্ছে না। বিশেষ করে যদি কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকে এবং চিকিৎসা কাজ করছে না, তাহলে এটি তাদের শেষ পর্যায়ের লক্ষণ। 

৭) শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া

সুস্থ বিড়ালের গায়ে কোনো খারাপ গন্ধ থাকে না। কিন্তু, যদি আপনার বিড়ালের গায়ে একটি অস্বাভাবিক মিষ্টি বা পচা গন্ধ আসে, তাহলে এটি দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এটি মারাত্মক কিডনি বা লিভারের সমস্যার সংকেত হতে পারে।

৮) শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তন

যদি আপনার বিড়ালের শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়, খুব ধীর বা খুব দ্রুত হয়, বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে এটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। এটি ফুসফুসের রোগ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা বা বার্ধক্যের লক্ষণ হতে পারে।

৯) প্রস্রাব বা মলত্যাগের সমস্যা

যদি আপনার বিড়ালটি হঠাৎ করে লিটার বক্সের বাইরে প্রস্রাব বা মলত্যাগ করতে শুরু করে, তাহলে এটি উদ্বেগজনক হতে পারে। অনেক সময় বয়স্ক বিড়ালদের প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয়, বা তারা দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে ঘুমের সময় নিজের শরীরেই প্রস্রাব করে ফেলে। এটি গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ।

১০) পছন্দের কাজ গুলোতে আগ্রহ হারানো

যদি আপনার বিড়ালটি আগে খেলাধুলা করতো, আপনাকে অনুসরণ করতো বা আপনাকে জড়িয়ে ঘুমাতো, কিন্তু এখন আর এগুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাহলে এটি একটি বড় সংকেত হতে পারে। বিড়ালের পছন্দের কাজে আগ্রহ হারানো মানে তারা হয়তো শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিড়ালের জীবনচক্রের শেষ ধাপ কোনটি?

বিড়াল তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একদম শান্ত হয়ে যায়। অনেক সময় তারা ঘরের নির্জন কোনো জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থাকে, কম নড়াচড়া করে এবং খাবার খেতে চায় না। কিছু বিড়াল মানুষের সঙ্গও এড়িয়ে চলে, যদিও কেউ কেউ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মালিকের সঙ্গ চায়।

বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে করণীয় 

যদি আপনার বিড়ালের মারা যাওয়ার লক্ষণ গুলো দেখা যায়, তবে প্রথমেই পশু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এছাড়া, নিচের কিছু বিষয় আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে, যেমন:

ভালো ও খারাপ দিনের হিসাব রাখুন: প্রতিদিন একটি ক্যালেন্ডারে ভালো দিনের জন্য হাসিমুখ এবং খারাপ দিনের জন্য দুঃখের মুখ চিহ্ন দিন। মাস শেষে দেখে নিন কোনটি বেশি। 

প্যালিয়েটিভ কেয়ার (Palliative Care): যদি চিকিৎসা কাজ না করে, তবে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ বা সান্ত্বনামূলক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। 

মানুষিকভাবে প্রস্তুত হন: আপনার বিড়াল যদি অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে এবং কোনো চিকিৎসাই কাজে আসছে না, তাহলে হয়তো তাকে বিদায় জানানোর সময় এসে গেছে। অনেক সময়, ইউথেনেশিয়া (Euthanasia) বা মানবিকভাবে মৃত্যুর ব্যবস্থা করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

মরা বিড়ালের যত্ন

মৃত বিড়ালের শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসা শুরু করতে পারে, তাই যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। বিড়ালটিকে প্লাস্টিক বা কাপড়ে মুড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে রাখুন যতক্ষণ না আপনি কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কবর দেয়ার ক্ষেত্রে নিম্ম লিখিত বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন। 

  • মরা বিড়াল কিভাবে কবর দিতে হয়?

আপনার বিড়ালকে সঠিকভাবে কবর দিতে একটি নিরাপদ স্থান নির্বাচন করুন এটা হতে পারে আপনার নিজস্ব বাগান বা কোনো নির্ধারিত কবরস্থান। এবার কমপক্ষে ৩-৪ ফুট গভীর গর্ত করুন যাতে অন্য প্রাণীরা সহজে তা খুঁড়তে না পারে। বিড়ালকে করব দেয়ার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করুন যাতে এটি সহজে মাটির সাথে মিশে যায়।

  • মরা বিড়াল কোথায় কবর দিতে হয়?

যদি সম্ভব হয়, নিজের বাগানেই বিড়ালটিকে কবর দেওয়া ভালো। তবে, স্থানীয় আইন অনুযায়ী, কিছু এলাকায় পশুর কবর দেওয়া নিষিদ্ধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে, পশু হাসপাতাল বা পোষা প্রাণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের খোঁজ করুন।

  • বিড়ালকে মাটির কত গভীরে পুঁতে রাখা উচিত?

বিড়ালটিকে কমপক্ষে ৩-৪ ফুট গভীরে পুঁতে রাখা উচিত, যাতে এটি সহজে উঠে না আসে এবং অন্য প্রাণীরা গর্ত না খুঁড়তে পারে। সবশেষে করবটি মাটি দিয়ে ভালোভাবে চাপা দিন এবং উপরে কিছু পাথর বা গাছের চারা লাগাতে পারেন, যা পরবর্তীতে স্মৃতির চিহ্ন হিসেবে থাকবে

মৃত্য বিড়াল সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর 

১) বিড়াল কিভাবে মৃত্যু বুঝতে পারে?

বিড়ালের শরীরে যখন ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা কমে আসে, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারে যে তাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। অনেক সময় তারা মালিকের কাছে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়, আবার অনেকে নির্জনতা খোঁজে।

২) পোষা বিড়াল মারা গেলে কি করতে হয়?

যদি আপনার প্রিয় বিড়ালটি মারা যায়, তাহলে যা করতে হবে তা হলো: প্রথমেই তার শরীরের তাপমাত্রা কমতে দিন। বিড়াল মারা যাওয়ার পর শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করবে। এরপর শান্তভাবে একটি কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর বিড়ালটিকে কবর দেয়ার ব্যবস্থা করুন। 

বিড়ালের শেষ বিদায়

আপনার প্রিয় বিড়ালটি আপনার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার শেষ সময়ে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে বিদায় জানানোটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এটি অবশ্যই দুঃখজনক, তবে মনে রাখবেন – আপনি তাকে ভালোবাসা, যত্ন ও আনন্দের জীবন উপহার দিয়েছেন। সে আপনাকে মনে রাখবে, যেমন আপনিও তাকে মনে রাখবেন। 

বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাওয়ার পর মৃত্যু নিশ্চিত। এমতাবস্থায় বিড়াল হারানোর কষ্ট সহ্য করা কঠিন, তবে সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিগুলোই আপনাকে সান্ত্বনা দেবে। তার ভালোবাসার স্মৃতি চিরকাল আপনার হৃদয়ে থাকবে। 

author-avatar

About Salim Mahamud

I am the author of PriyoPets. Here I publish very helpful content about cat health, cat food, cat behavior, and other things that a cat owner needs to know. Personally, I am also a cat lover, and I have two cats also, so I have good knowledge about it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *