Cat Health

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ সমূহ এবং করণীয় পদক্ষেপ

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ বিড়াল প্রেগন্যান্ট হলে কিভাবে বুঝব

আচ্ছা, আপনার আদরের বিড়ালটি কি একটু অন্যরকম আচরণ করছে? হয়তো একটু বেশি ঘুমোচ্ছে, কিংবা তার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে? হতেও পারে আপনার বিড়ালটি প্রেগন্যান্ট! কেননা, বিড়াল প্রেগন্যান্ট হলে তার মধ্যে এমন কিছু লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু বিড়াল গর্ভবতী কি-না তা বুঝার জন্য কি কোনো মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে? মূলত না, বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার বিড়ালটি মা হতে চলেছে নাকি অন্য কোন কিছু। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি চলে যাই মূল আলোচনায়।  

বিড়ালের প্রেগন্যান্সি 

প্রায় সময় দেখা যায় বিড়াল কিছুদিনের জন্য বাসা থেকে পালিয়ে যায় আবার ফিরেও আসে। মূলত এটা বিড়াল তখন করে যখন বিড়ালের হিট আসে। যাইহোক, এই সময় অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে আপনার বিড়ালের প্রেগন্যান্ট হওয়ার। 

শুধু তাই নয়, আপনার বাড়িতে যদি একাধিক বিড়াল থাকে (ছেলে-মেয়ে উভয়) সেক্ষেত্রেও খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেয়ে বিড়াল প্রেগনেন্ট হতে পারে।  

বিড়ালের প্রেগন্যান্সি প্রায় ৬৩ দিন স্থায়ী হয়, তবে এটি ৫৮ থেকে ৬৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এই সময়কালে বিড়ালের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাকে সঠিক খাবার দেওয়া এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাটাও জরুরি।

প্রশ্ন থাকতে পারে, “বিড়ালের গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো কতদিনে বোঝা যায়?”  মূলত গর্ভবতী বিড়ালের লক্ষণ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যায়। স্তনের পরিবর্তন, মর্নিং সিকনেস এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। তাহলে এবার বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নেয়া যাক। 

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নিন 

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হলে কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। তবে, ক্ষেত্র বিশেষে বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে যে লক্ষণ গুলো দেখা যায়, সেগুলো নিচে উল্লেখ্য করা হলো:

#১. মর্নিং সিকনেস বা সকালের দুর্বলতা

মানুষের মতো বিড়ালেরও মর্নিং সিকনেস হতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম দিকে বিড়ালের বমি বমি ভাব বা বমি হতে দেখা যায়। এটা সাধারণত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়। তবে, সব বিড়ালের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা যায় না। যদি দেখেন আপনার বিড়ালটি সকালে খাবার খেতে চাইছে না বা খেলেও বমি করে দিচ্ছে, তাহলে এটি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ।

#২. স্তনের পরিবর্তন

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হলে তার স্তনের আকার পরিবর্তন হতে শুরু করে। গর্ভধারণের প্রায় ২-৩ সপ্তাহ পর স্তনবৃন্ত (যা সাধারণত নিপল নামে পরিচিত) গুলো বড় ও গোলাপি হয়ে ওঠে। এই পরিবর্তনকে ‘পিংকিং আপ’ বলা হয়। আপনি যদি আপনার বিড়ালের স্তনে এই ধরনের পরিবর্তন দেখেন, তাহলে বুঝবেন সে সম্ভবত গর্ভবতী।

#৩. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

গর্ভবতী বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসাটা খুবই স্বাভাবিক। কিছু বিড়াল এই সময় বেশি খেতে শুরু করে, আবার কিছু বিড়ালের খাবারে অরুচি দেখা যায়। যদি আপনার বিড়াল আগে যা খেত তার থেকে বেশি বা কম খাচ্ছে, তাহলে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে। তবে, শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন দেখে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে সে প্রেগন্যান্ট।

#৪. ওজনে বৃদ্ধি

বিড়াল গর্ভবতী হলে তার ওজন বাড়তে শুরু করে। সাধারণত গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহ পর থেকে ওজন বৃদ্ধি হতে থাকে। বিড়ালের পেট ধীরে ধীরে ফুলতে শুরু করে এবং তার শারীরিক গঠনে পরিবর্তন আসে। নিয়মিত ওজন মাপলে আপনি এই পরিবর্তন সহজেই ধরতে পারবেন।

#৫. ক্লান্তিবোধ

মানুষের মতো বিড়ালেরাও গর্ভাবস্থায় ক্লান্ত বোধ করে। আপনার বিড়াল যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমাতে শুরু করে বা অলসতা দেখায়, তাহলে এটি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ। কেননা, গর্ভাবস্থায় শরীরের পরিবর্তনের কারণে বিড়াল দুর্বল হয়ে যায় এবং বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে।

#৬. পেটের আকার বৃদ্ধি

বিড়াল গর্ভবতী হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর তার পেটের আকার বাড়তে শুরু করে। তবে, পেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার আগে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন যে বিড়ালটি গর্ভবতী কিনা। পেটের আকার বাড়লে আলতো করে পেটে হাত দিয়ে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা যেতে পারে।

#৭. মেজাজের পরিবর্তন

প্রেগন্যান্সির সময় বিড়ালের মেজাজে পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক। কিছু বিড়াল এই সময় শান্ত ও স্নেহপ্রবণ হয়ে ওঠে, আবার কিছু বিড়াল খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। যদি দেখেন আপনার বিড়ালটি আগের চেয়ে বেশি আদর চাইছে বা হঠাৎ করেই agresif হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এটি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হতে পারে।

#৮. বাসা বানানোর প্রবণতা

এটা সবচেয়ে কিউট! গর্ভধারণের শেষ দিকে বিড়াল বাসা বানানোর জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। সে এমন একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক জায়গা খোঁজে, যেখানে সে তার বাচ্চাদের জন্ম দিতে পারবে। আপনার বিড়াল যদি ঘরের কোণ, আলমারির ভেতর বা অন্য কোনো গোপন জায়গায় আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করে, তাহলে বুঝবেন সে মা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

#৯. আল্ট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে

উপরের সব গুলো থেকে সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। আল্ট্রাসাউন্ড বা এক্স-রে-এর মাধ্যমে বিড়াল গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়। আল্ট্রাসাউন্ড সাধারণত গর্ভধারণের ২০ দিন পর করা হয়, যেখানে এক্স-রে ৪৫ দিনের পর করা ভালো।

বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ: কি কি পরিবর্তন দেখা যায়?

বিড়াল গর্ভবতী হওয়ার পরে তার শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ওজন বৃদ্ধি
  • পেটের আকার বৃদ্ধি
  • স্তনের পরিবর্তন
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
  • মেজাজের পরিবর্তন
  • ক্লান্তিবোধ
  • বাসা বানানোর প্রবণতা

গর্ভবতী বিড়ালের যত্ন যেভাবে নিতে হবে 

গর্ভবতী বিড়ালের সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। যেমন: গর্ভবতী বিড়ালকে উচ্চ মানের এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্রে Vet এর পরামর্শ অনুযায়ী প্রেগন্যান্সি এবং স্তন্যদানকালে উপযোগী খাবার বাছাই করুন। PriyoPets এ পেয়ে যাবেন গর্ভবতী বিড়ালের জন্য পার্ফেক্ট Cat Food

পাশাপাশি বিড়ালকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন। তার জন্য একটি আরামদায়ক এবং নিরাপদ জায়গা তৈরি করুন, যেখানে সে শান্তিতে ঘুমাতে পারে। অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় বিড়ালের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। একজম Vet বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবেন।

বিড়াল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে। বিড়ালের থাকার জায়গা এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন যাতে করে বিড়াল সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। এবং বিড়ালকে কোনো ধরনের মানসিক চাপে রাখা যাবে না। তাই অতিরিক্ত শব্দ বা হৈ-চৈ থেকে দূরে রাখুন।

  • গর্ভবতী বিড়ালের খাবার হিসেবে কি কি রাখা উচিৎ? 

গর্ভবতী বিড়ালের জন্য সঠিক খাবার বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় বিড়ালের শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা থাকে। তাই, তাকে উচ্চ প্রোটিন এবং ক্যালোরিযুক্ত খাবার দিতে হবে। বাজারে গর্ভবতী বিড়ালের জন্য বিশেষ খাবার পাওয়া যায়, যা Vet এর পরামর্শ অনুযায়ী দিতে পারেন। তবে প্রাথমিকভাবে নিমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছি:

পুষ্টি উপাদানগুরুত্ব এবং উৎস
প্রোটিনমাংস, ডিম এবং মাছের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিন।
ফ্যাটস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিড়ালের শক্তি সরবরাহ করে এবং বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়ামক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন এবং দুধ উৎপাদনের জন্য জরুরি।
ভিটামিন ও মিনারেলভিটামিন ও মিনারেল বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার সময় করণীয়

শুধুমাত্র গর্ভবতী থাকা অবস্থাতেই নয় বরং বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার সময় কিছু জিনিস মনে রাখা দরকার। এই বিষয়ে নিমে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

বিড়ালের জন্য একটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক স্থান তৈরি করুন, যেখানে সে শান্তিতে বাচ্চা দিতে পারবে। বিড়ালের প্রসবের সময় তাকে পর্যবেক্ষণ করুন, তবে বেশি বিরক্ত করবেন না। যদি বিড়ালের প্রসব কঠিন মনে হয় বা কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের সাহায্য নিন। বাচ্চা হওয়ার পরে বিড়াল এবং তার বাচ্চাদের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন। 

বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ  সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর

১) বিড়াল কত বছর বয়সে গর্ভবতী হয়?

উত্তর: বিড়াল সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথমবার গর্ভবতী হতে পারে। তবে, কম বয়সে গর্ভধারণ বিড়ালের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, বিড়ালকে প্রজননক্ষম হওয়ার আগে spay বা neuter করানো ভালো।

২) বিড়াল কতদিন গর্ভবতী থাকে?

উত্তর: বিড়াল সাধারণত ৬৩ দিন গর্ভবতী থাকে, তবে এটি ৫৮ থেকে ৬৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এই সময়কালে বিড়ালের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

৩) বিড়াল বছরে কতবার বাচ্চা দেয়?

উত্তর: বিড়াল বছরে ২ থেকে ৩ বার বাচ্চা দিতে পারে। বিড়ালের প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তারা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

৪) মিলনের কতদিন পর বিড়াল গর্ভবতী হয়?

উত্তর: মিলনের প্রায় ২০ দিনের মধ্যে বিড়ালের গর্ভধারণের লক্ষণগুলো বোঝা যেতে শুরু করে। তবে, নিশ্চিত হওয়ার জন্য পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫) বিড়াল প্রেগন্যান্ট কিনা তা জানার জন্য কি কি টেস্ট করা যায়?
উত্তর: বিড়াল প্রেগন্যান্ট কিনা তা জানার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে করা যায়। আল্ট্রাসাউন্ড সাধারণত গর্ভধারণের ২০ দিন পর এবং এক্স-রে ৪৫ দিনের পর করা হয়।

৬) বিড়াল বাচ্চা দেওয়ার পরে কি কি যত্ন নিতে হয়?
উত্তর: বিড়াল বাচ্চা দেওয়ার পরে তাকে পর্যাপ্ত খাবার ও জল সরবরাহ করতে হয়। এছাড়াও, তার এবং তার বাচ্চাদের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে হয়।

চূড়ান্ত মন্তব্য 

যদিও বিড়াল গর্ভবতী অবস্থায় যাবতীয় সকল বিষয়ে নিজেই খেয়াল রাখে তবুও যেহেতু আপনি বিড়ালকে আপন করে নিয়েছেন তাই তার সর্বোচ্চ যত্ন নেয়া আপনার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে বিড়াল প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো ভালো ভাবে পর্যাবেক্ষন করে তার জন্য সর্বোচ্চ সেবাটুকু নিশ্চয়ন করুন। 

author-avatar

About Salim Mahamud

I am the author of PriyoPets. Here I publish very helpful content about cat health, cat food, cat behavior, and other things that a cat owner needs to know. Personally, I am also a cat lover, and I have two cats also, so I have good knowledge about it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *