Cat Health

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা 

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা

আচ্ছা, ভাবুন তো আপনার আদরের বিড়ালটা হঠাৎ করেই কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে! খাবার খাচ্ছে না, শুধু বমি করছে আর দুর্বল হয়ে এক কোণে পড়ে আছে। এই অবস্থা দেখলে যে কারো মন খারাপ হয়ে যাবে, তাই না? বিড়ালের এইরকম একটা ভয়ঙ্কর রোগ হল ডিপথেরিয়া। এই রোগটা বিড়ালের জন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

আজ আমরা এই ব্লগ পোষ্টে ডিপথেরিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ডিপথেরিয়া আসলে কী, এর লক্ষণগুলো কী কী, কেন হয় এবং এর থেকে আপনার বিড়ালকে বাঁচানোর উপায়গুলোই বা কী – সবকিছুই আমরা সহজভাবে জানার চেষ্টা করবো। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনার একটুখানি সচেতনতাই কিন্তু আপনার বিড়ালের জীবন বাঁচাতে পারে। তাই, বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আজকের আলোচনাটি খুবই জরুরি।

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ (Symptoms of Diphtheria)

প্রথমেই বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো চেনাটা খুব জরুরি। কারণ, দ্রুত লক্ষণগুলো ধরতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা যায়। নিচে কিছু প্রধান লক্ষণ আলোচনা করা হলো:

প্রাথমিক লক্ষণসমূহ (Early Symptoms)

ডিপথেরিয়া রোগের শুরুতে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যেগুলো অনেক সময় আমরা তেমন গুরুত্ব দেই না। কিন্তু এই ছোট ছোট লক্ষণগুলোই পরবর্তীতে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

১) ডায়রিয়া (Diarrhea) ও বমি (Vomiting): ডিপথেরিয়ার শুরুতে বিড়ালের ডায়রিয়া (Diarrhea) হতে পারে। মলের (stool) সাথে রক্তও যেতে পারে, যেটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বমি হওয়াটাও খুব স্বাভাবিক। যদি দেখেন আপনার বিড়াল ঘন ঘন বমি করছে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

২) পেটে অস্বস্তি ও জ্বালা: পেটে অস্বস্তি হলে বিড়াল অস্থির হয়ে যায়। দেখবেন, সে চুপচাপ বসে না থেকে ছটফট করছে। পেটে ব্যথার কারণে মেজাজও খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।

৩) খাবার গ্রহণে অনীহা (Loss of appetite): ডিপথেরিয়া হলে বিড়ালের একদম খাবার ইচ্ছে করে না। এটা ধীরে ধীরে তার ওজন কমিয়ে দেয় এবং দুর্বল করে ফেলে।

রোগের বিস্তার লাভের পরবর্তী লক্ষণ (Later stage symptoms)

যদি প্রাথমিক লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা হয়, তাহলে রোগ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তখন নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়:

১) দুর্বলতা ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়া: বিড়াল এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে সাধারণ কাজকর্ম করার মতো এনার্জিও (energy) থাকে না। সারাদিন শুধু শুয়ে থাকে আর ডাকেও না।

২) ডিহাইড্রেশন (Dehydration): বমি আর ডায়রিয়ার (Diarrhea) কারণে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন (Dehydration) মারাত্মক হতে পারে, এমনকি কিডনির (kidney) সমস্যাও হতে পারে।

৩) শারীরিক অবস্থার অবনতি: ডিপথেরিয়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগের (heart disease) মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ: আমার এক পরিচিতজনের বিড়ালের প্রথমে শুধু একটু বমি হয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো সাধারণ কোনো সমস্যা। কিন্তু যখন দেখলেন বিড়ালটা একদম খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে, তখন তিনি পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান যে বিড়ালটির ডিপথেরিয়া হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করার কারণে বিড়ালটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের কারণ ও বিস্তার (Causes and Spread of Diphtheria)

ডিপথেরিয়া কেন হয় এবং কিভাবে ছড়ায়, সেটা জানা থাকলে এই রোগ থেকে আপনার বিড়ালকে বাঁচানো সহজ হবে। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

মূল কারণ: করোনা ভাইরাস (Main Cause: Corona Virus)

বিড়ালের ডিপথেরিয়া মূলত করোনা ভাইরাসের (Corona virus) কারণে হয়। মানুষের করোনা ভাইরাসের (Corona virus) সাথে এর কিছুটা মিল থাকলেও, এই ভাইরাস শুধু বিড়ালদেরই আক্রান্ত করে।

এই ভাইরাস প্রথমে বিড়ালের পেটের মধ্যে সংক্রমণ (infection) ঘটায়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া (Diarrhea) ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত মুখ ও নাকের মাধ্যমে এই ভাইরাস বিড়ালের শরীরে প্রবেশ করে।

সংক্রমণের উৎস ও বিস্তার (Sources and Spread of Infection)

ডিপথেরিয়া খুব সহজেই এক বিড়াল থেকে অন্য বিড়ালে ছড়াতে পারে। তাই এর উৎসগুলো সম্পর্কে জানা দরকার।

  • সংক্রামিত বিড়াল থেকে ছড়ানো: যদি কোনো বিড়ালের ডিপথেরিয়া হয়ে থাকে, তাহলে তার লালা, মল বা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্য বিড়ালে এই রোগ ছড়াতে পারে।
  • দূষিত পরিবেশ: ভাইরাস কোনো জায়গায় লেগে থাকলে সেখান থেকেও ছড়াতে পারে। যেমন, খাবারের পাত্র, জলের পাত্র অথবা বিড়ালের খেলার জিনিস থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে।
  • ঝুঁকিপূর্ণ বিড়াল: ছোট বিড়াল এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বিড়ালদের ডিপথেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া, যেসব বিড়াল একসাথে অনেকজনের সাথে থাকে, তাদের মধ্যেও এই রোগ দ্রুত ছড়ায়।

পরিসংখ্যান: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডিপথেরিয়া আক্রান্ত বিড়ালের মধ্যে প্রায় ২৫-৫০% বিড়াল মারা যায়। তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে এই সংখ্যা কমানো সম্ভব।

বিড়ালের ডিপথেরিয়া হলে করণীয় (Prevention and Treatment)

ডিপথেরিয়া থেকে আপনার বিড়ালকে বাঁচাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা খুবই জরুরি। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

প্রতিরোধমূলক উপায় (Preventive Measures)

কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে আপনার বিড়ালকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন।

১) ভ্যাকসিন (Vaccine): যদিও বিড়ালের ডিপথেরিয়া প্রতিরোধের জন্য তেমন কোনো ভ্যাকসিন (vaccine) নেই, তবুও নিয়মিত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ভ্যাকসিন (vaccine) হয়তো অন্য রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, যা ডিপথেরিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বিড়ালের থাকার জায়গা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। খাবারের পাত্র ও জলের পাত্র নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।

৩) আক্রান্ত বিড়ালকে আলাদা রাখা: যদি কোনো বিড়াল ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হয়, তবে তাকে সুস্থ বিড়াল থেকে দূরে রাখুন। এতে অন্য বিড়ালদের মধ্যে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমবে।

চিকিৎসা পদ্ধতি (Treatment)

বিড়ালের ডিপথেরিয়া ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। ডিপথেরিয়ার লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের কাছে যান। কেননা, তিনি পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। ডিহাইড্রেশন (dehydration) কমাতে বিড়ালকে স্যালাইন (saline) দিতে হবে। 

এছাড়া, দুর্বলতা কমানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাছাড়া সংক্রমণ (infection) কমাতে পশুচিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক (antibiotics) দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেবেন না। এক নজরে চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা নিন। 

চিকিৎসার উপাদানকরণীয়
স্যালাইন (Saline)ডিহাইড্রেশন (dehydration) কমাতে সঠিক পরিমাণে স্যালাইন (saline) দিতে হবে। পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিরাপথে বা ত্বকের নিচে স্যালাইন (saline) দেওয়া যেতে পারে।
পুষ্টিকর খাবারসহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, যা বিড়াল সহজে খেতে পারে। নরম খাবার, যেমন – সিদ্ধ মাংস বা মাছ দেওয়া যেতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics)সংক্রমণ (infection) কমাতে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক (antibiotics) ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না, তবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (infection) ঠেকাতে সাহায্য করে।

অন্যান্য বিবেচ্য বিষয় (Other Considerations)

ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো অনেক সময় অন্য রোগের সাথে মিলে যেতে পারে। তাই সঠিক রোগ নির্ণয় করা খুব জরুরি। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো প্যানক্রিয়াটাইটিস (pancreatitis), খাদ্য বিষক্রিয়া বা অন্য কোনো পেটের রোগের সাথে মিলে যেতে পারে। পশুচিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা করে ডিপথেরিয়া নিশ্চিত করতে পারেন। এর মধ্যে মলের (stool) পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা এবং আলট্রাসাউন্ডের (ultrasound) মতো পরীক্ষাও থাকতে পারে।

বিড়ালের মালিকদের জন্য পরামর্শ 

মালিক হিসেবে বিড়ালের প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব আছে। আর সেটি হলো রোগের লক্ষণগুলো চেনা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে পশুচিকিৎসকের কাছে যান।

বিড়ালকে সুস্থ রাখতে বছরে একবার পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। অসুস্থ বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন দেখান। তাদের সাথে কথা বলুন এবং তাদের পছন্দের খাবার দিন।

বিড়ালের ডিপথেরিয়া একটি মারাত্মক রোগ, তবে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে বিড়ালকে সুস্থ করা সম্ভব। আপনার সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই আপনার বিড়ালকে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে পারেন। পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সুবিধা নিন।

author-avatar

About Salim Mahamud

I am the author of PriyoPets. Here I publish very helpful content about cat health, cat food, cat behavior, and other things that a cat owner needs to know. Personally, I am also a cat lover, and I have two cats also, so I have good knowledge about it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *