Cat Health

আপনার বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় সমূহ  

আপনার বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায়

বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো রাখাটা কিন্তু খুব জরুরি, শুধু খাবার দিলেই তো আর সবটা হয় না, তাই না? আপনার আদরের বিড়ালটা যেন সবসময় সুস্থ আর হাসিখুশি থাকে, সেই জন্য কিছু জিনিস খেয়াল রাখা দরকার। আসুন, আমরা জেনে নিই বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় এবং কিভাবে আপনার বিড়ালের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত। 

বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় 

বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো রাখা কেন এত দরকারি, সেটা নিশ্চয়ই আপনি বোঝেন। একটা সুস্থ বিড়াল মানে আপনার ঘরে হাসি-খুশি আর আনন্দ। যদি আপনার বিড়াল অসুস্থ থাকে, তাহলে আপনারও মন খারাপ থাকবে, তাই না?

এই ব্লগ পোষ্ট-এ আমরা বিড়ালের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক কিছু আলোচনা করবো – কী খাওয়ালে ও সুস্থ থাকবে, কেমন পরিবেশে ও ভালো থাকবে, আর কী কী রোগ হতে পারে এবং সেগুলোর থেকে কিভাবে ওকে বাঁচানো যায়।

আপনার বিড়ালের একটা সুন্দর আর সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে যা কিছু দরকার, সব কিছুই এখানে আলোচনা করা হবে।

১) সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো

বিড়ালের খাবারের প্রয়োজনীয়তা

বিড়ালের শরীরের জন্য সঠিক পুষ্টি খুব দরকারি। যেমন আমাদের দরকার, ওদেরও দরকার। প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল – এগুলো ঠিক পরিমাণে না পেলে বিড়াল অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

  • প্রোটিন: বিড়ালের মাংসপেশি (muscles) তৈরি করার জন্য প্রোটিন খুব দরকারি।
  • ফ্যাট: এটা ওদের শরীরে শক্তি জোগায় আর ত্বক (skin) ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ও মিনারেল: ভিটামিন আর মিনারেল রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অন্যান্য কাজগুলো ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে।

টাউরিন (Taurine) নামে একটা জিনিস আছে, যেটা বিড়ালের জন্য খুব জরুরি। এটা ওদের হার্ট (heart) আর চোখের জন্য খুব দরকারি, কিন্তু বিড়ালের শরীর এটা তৈরি করতে পারে না। তাই বিড়ালের খাবারে এটা অবশ্যই থাকতে হবে।

ছোট বিড়াল, বড় বিড়াল আর বুড়ো বিড়ালের খাবারের চাহিদা কিন্তু আলাদা।

  • ছোট বিড়াল (Kitten): এদের বেশি প্রোটিন আর ক্যালোরি দরকার, কারণ এরা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে।
  • পূর্ণ বয়স্ক বিড়াল (Adult Cat): এদের ব্যালেন্সড খাবার দরকার, যাতে ওজন ঠিক থাকে আর শরীর সুস্থ থাকে।
  • বয়স্ক বিড়াল (Senior Cat): এদের কম ক্যালোরি আর সহজে হজম (digest) হয় এমন খাবার দরকার, কারণ এদের হজম ক্ষমতা কমে যায়।

ভালো মানের খাবার নির্বাচন

বিড়ালের জন্য ভালো খাবার বাছাটা খুব জরুরি। খাবার কেনার আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদানগুলো ভালো করে দেখে নেবেন। যে খাবারে মাংস বা মাছের পরিমাণ বেশি, সেই খাবারগুলো ভালো। ভালো ব্র্যান্ডের খাবার বাছতে পারেন, কারণ তারা খাবারের মান নিয়ে বেশি সচেতন থাকে।

ওয়েট ফুড (Wet Food) আর ড্রাই ফুড (Dry Food) – এই দুই ধরনের খাবারই বাজারে পাওয়া যায়। কোনটা ভালো, সেটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে।

ওয়েট ফুড-এ জলের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই এটা বিড়ালের শরীরকে হাইড্রেটেড (hydrated) রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ড্রাই ফুড দাঁতের জন্য ভালো, কারণ এটা দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

যদি আপনার বিড়ালের ফুড অ্যালার্জি (Food Allergy) বা সেনসিটিভিটি (Sensitivity) থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবার বাছতে হবে। কিছু বিড়ালের গরুর মাংস বা দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা হতে পারে।

খাবার দেওয়ার সঠিক নিয়ম

বিড়ালকে কতটা খাবার দেবেন, সেটা ওর ওজন, বয়স আর অ্যাকটিভিটি লেভেল (Activity level) এর উপর নির্ভর করে।

  • খুব ছোট বিড়ালকে দিনে ৩-৪ বার অল্প অল্প করে খাবার দিতে হয়।
  • বড় বিড়ালকে দিনে ২ বার খাবার দিলেই যথেষ্ট।

বিড়ালের জন্য কিছু খাবার ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন:চকলেট বিড়ালের জন্য খুবই বিষাক্ত। পেঁয়াজ ও রসুন খেলে বিড়ালের রক্তাল্পতা (anemia) হতে পারে। নিম্মে বিড়ালের বয়স অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ ও ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে জানানো হলো (ছক আঁকারে) 

বিড়ালের বয়সখাবারের পরিমাণ (আনুমানিক)খাবারের ফ্রিকোয়েন্সি
২-৬ মাস50-80 গ্রামদিনে ৩-৪ বার
৬ মাস – ১ বছর70-90 গ্রামদিনে ২-৩ বার
১ বছর +80-120 গ্রামদিনে ২ বার

২) স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জীবনযাপন

  • বিড়ালকে নিরাপদ ও আরামদায়ক বাসস্থান দিন 

বিড়ালের জন্য একটা নিরাপদ আর আরামদায়ক জায়গা খুব দরকারি। ঘরের মধ্যে একটা শান্ত কোণ তৈরি করুন, যেখানে ও বিশ্রাম নিতে পারবে। স্ক্র্যাচিং পোস্ট (Scratching post) রাখুন, যাতে ও নিজের নখ ধার করতে পারে এবং আপনার আসবাবপত্র রক্ষা পায়। তাছাড়া বিড়ালকে লুকানোর জন্য বা একটু উঁচু জায়গায় বসার জন্য একটা উঁচু জায়গা করে দিন। বিড়াল সাধারণত উঁচু জায়গায় বসতে পছন্দ করে।

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিড়ালের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। লিটার বক্স (Litter box) নিয়মিত পরিষ্কার করুন। নোংরা লিটার বক্সে বিড়াল পটি (Potty) করতে পছন্দ করে না। খাবার ও জলের পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করুন, যাতে কোনো জীবাণু না জন্মাতে পারে। এবং বিছানা এবং খেলার জায়গাগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত।

  • ব্যায়াম ও খেলাধুলা

বিড়ালের শরীর আর মন ভালো রাখার জন্য ব্যায়াম আর খেলাধুলা খুব দরকারি। বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিয়ে বিড়ালকে ব্যস্ত রাখুন। যেমন – লেজার পয়েন্টার, ফেদার টয় ইত্যাদি। দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট বিড়ালের সাথে খেলুন। এতে ওদের শরীরে রক্ত চলাচল ভালো থাকে এবং মনও ভালো থাকে।

৩) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও যত্ন

  • ভেটেরিনারি ভিজিট

নিয়মিত পশুচিকিৎসকের (veterinarian) কাছে নিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি। পশুচিকিৎসক বিড়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা থাকলে তা আগে থেকেই ধরতে পারবেন। তাছাড়া ভ্যাকসিনেশন (Vaccination) আর ডওয়ার্মিং (Deworming) খুব জরুরি। এগুলো বিড়ালকে অনেক রোগ থেকে বাঁচাতে পারে। বিড়ালের কিছু সাধারণ রোগ আছে, যেমন – ফেলিন লিউকেমিয়া, ফেলিন এইডস। এই রোগগুলোর লক্ষণ জানা থাকলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়।

  • গ্রুমিং

বিড়ালের লোম পরিষ্কার রাখা, নখ কাটা, দাঁতের যত্ন নেওয়া – এগুলোও খুব দরকারি। নিয়মিত লোম ব্রাশ করলে বিড়ালের শরীরে রক্ত চলাচল ভালো থাকে এবং লোমগুলোও সুন্দর থাকে। নখগুলো সময় মতো কেটে দিন, যাতে আপনার বাচ্চার বা আপনার নিজের শরীরে আঁচড় না লাগে। তাছাড়া দাঁতের যত্ন নিলে দাঁতের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • পরজীবী নিয়ন্ত্রণ

ফ্লি (Flea) আর টিক (Tick) থেকে বিড়ালকে বাঁচানো খুব জরুরি, কারণ এগুলো বিড়ালের শরীরে নানা রোগ ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন। পাশাপাশি ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন, যাতে পরজীবী না ছড়াতে পারে।

৪) মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণের দিকে মননিবেশ

  • মানসিক উদ্দীপনা

বিড়ালকে মানসিকভাবে সতেজ রাখাটা খুব দরকারি। নতুন খেলনা আর পাজল টয় (Puzzle toy) দিয়ে ওদের খেলতে দিন। বিড়ালের সাথে কথা বলুন, ওদের আদর করুন। এতে ওরা খুশি থাকে।

  • স্ট্রেস কমানো

বিড়ালের স্ট্রেস (Stress) কমানোটা খুব জরুরি। বাড়িতে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখুন, যাতে বিড়াল বিশ্রাম নিতে পারে। নতুন পরিবেশে আসলে বিড়ালকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করান। যদি আপনার বাড়িতে অনেক বিড়াল থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে মারামারি কমানোর চেষ্টা করুন।

  • আচরণগত সমস্যা

বিড়ালের কিছু আচরণগত সমস্যা থাকতে পারে, যেমন – আসবাবপত্র আঁচড়ানো, লিটার বক্স-এর বাইরে পটি (Potty) করা। এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পশুচিকিৎসক বা কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

৫) বিশেষ পরিস্থিতি ও জরুরি অবস্থা

  • অসুস্থতা সনাক্তকরণ

বিড়াল অসুস্থ হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন – খাবারে অরুচি, বমি, দুর্বলতা। এই লক্ষণগুলো দেখলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তাছাড়া যদি শ্বাসকষ্ট হয় বা কোনো আঘাত লাগে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

  • বয়সজনিত সমস্যা

বয়স্ক বিড়ালের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, যেমন – আর্থ্রাইটিস (Arthritis), কিডনি রোগ। এই রোগগুলোর লক্ষণ জানা থাকলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়। ওদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করুন।

  • দুর্যোগ মোকাবেলা

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিড়ালকে কিভাবে নিরাপদে রাখবেন, সেটা জানা খুব জরুরি। একটা ইমার্জেন্সি কিট (Emergency kit) তৈরি করুন, যেখানে খাবার, জল, ঔষধ থাকবে। দুর্যোগের পরে বিড়ালকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

বিড়ালের স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় হিসেবে উপরে উল্লেখ্যিত বিষয় গুলো মনে রাখা খুব জরুরি। আপনার একটুখানি যত্ন আর ভালোবাসাই পারে আপনার বিড়ালকে সুস্থ আর সুখী রাখতে। তাই, আজই আপনার বিড়ালের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন।

author-avatar

About Salim Mahamud

I am the author of PriyoPets. Here I publish very helpful content about cat health, cat food, cat behavior, and other things that a cat owner needs to know. Personally, I am also a cat lover, and I have two cats also, so I have good knowledge about it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *